আইএবি নিউজ: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন গ্রামে-গঞ্জেও ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, বাঙ্গালী সংস্কৃতির সার্বজনীনতার তত্ত্বের আড়ালে এসব বিধর্মীয় প্রথা অনুশীলনের জন্যে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ তৌহিদী জনতাকে বাধ্য করার উদ্যোগ গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা অমুসলিমদের প্রতীক ও উপমা ব্যবহার করে কল্যাণ কামনা করা মুসলিম সমাজে প্রচলিত নয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা একটি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ধর্ম ও সংস্কৃতির অংশ। মূলতঃ দেব-দেবীকে উদ্দেশ্য করে এসব আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী কল্যাণ কামনা করে থাকে।
এক বিবৃতিতে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় থাকে বিচিত্র রকম পশুপাখীর মুখোশ পরিহিত নর-নারী। এরা বাঘ বিড়ালের মুখে চিংড়ি, মাছ, সন্তানতুল্য ছোট মাছ, হাঁস, পাখা মেলা ময়ূর, লক্ষ্মী পেঁচা, হরিণ শাবকের মাধ্যমে বাঙ্গালীর আবহমান ঐতিহ্যকে তুলে ধরার দাবি করে। যেসব পশু-পাখি নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়, তা ও এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের পরিপন্থী। কেননা সংখ্যালঘু একটি জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাস মোতাবেক পেঁচা মঙ্গলের প্রতীক ও লক্ষ্মীর বাহন, ইঁদুর গণেশের বাহন, হনুমান রামের বাহন, হাঁস স্বরসতীর বাহন, সিংহ দূর্গার বাহন, গাভী রামের সহযাত্রী, সূর্য দেবতার প্রতীক ও ময়ূর কার্তিকের বাহন। কেউ কেউ শরীরে দেব-দেবীর, জন্তু-জানোয়ারের প্রতিকৃতি, কালির লোহিত বরণ জিহ্বা, গণেসের মস্তক ও মনসার উল্কি একে ভাড় সেজে এবং মৃদঙ্গ-মন্দিরা, খোল-করতাল বাজিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। এদেশে একটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ধর্ম হচ্ছে প্রতীকবাদী। প্রতীকের মাধ্যমে তারা পূজা-প্রার্থণা করেন। ইসলামে এটা সম্ভব নয়। তাই মঙ্গল শোভাযাত্রায় যেসব প্রতীক উপস্থিত করা হয়, মুসলমানদের কাছে তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
তিনি বলেন, পশু-পাখিকে সমৃদ্ধি ও কল্যাণের প্রতীক হিসেবে মনে করা একজন তৌহিদবাদী মুসলমানের পক্ষে কোনক্রমেই সম্ভব নয়। মুসলমানরা বিশ্বাস করে সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কেবলমাত্র আল্লাহর কাছ থেকেই আসতে পারে। এ-জন্যে তারা তাঁর কাছে মুনাজাত করে। মুসলমানের সংস্কৃতির উৎস ইসলামী জীবন দর্শন ভিত্তিক মূল্যবোধ। তৌহিদ এর বুনিয়াদ। স্থানীয় ও লোকজ ঐতিহ্যের উপাদান মুসলিম সংস্কৃতিতে ও আছে, কিন্তু এর অবস্থান ইসলামী ঐতিহ্যের সীমানা অতিক্রম করে নয়। আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো কাছে মঙ্গল প্রার্থণা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে কল্যাণ চাওয়া মুসলিম সংস্কৃতির অংশ নয়।
তিনি হিজরী সনের পরিবর্তিত রূপ বাংলা সনের পহেলা বৈশাখকে আমাদের প্রধান সামাজিক উৎসব হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন যে, এই উৎসব নিজস্ব গুরুত্বে জাতীয় জীবনে বিশেষ চেতনার দ্যোতক। কিন্তু মঙ্গলশোভাযাত্রা, মঙ্গলঘট, মঙ্গল প্রদীপ, মাঙ্গলিক প্রতীক অঙ্কন, চৈত্র সংক্রান্তি, পান্তা ইলিশ, উলুধ্বনী, রাখি বন্ধন, ধুতি পরিধান সিঁদুরের ব্যবহার, হোলি খেলা, অজাÍ ষ্টাইলে নাভিমূল অনাবৃত রেখে শাড়ি পরিধান প্রভৃতি আমদানী করা বিশেষ ধর্মীয় কুসংষ্কারাচ্ছন্ন আচার-রীতির আগ্রাসনে পহেলা বৈশাখের চেতনাকে বিজাতীয়মুখি করা হচ্ছে। এই আগ্রাসন পরিচালিত হচ্ছে আমাদের নিজস্ব সংষ্কৃতির স্বাভাবিক বিবর্তনকে বাধাগ্রস্ত করে একটি স্বাধীন জাতির স্বাতন্ত্রবোধকে ধ্বংস করার জন্যে বিভিন্ন প্রথা পদ্ধতি চালু করার মাধ্যমে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের দৃষ্টিতে অধিকাংশ মানুষের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকেই সার্বজনীনতার মর্যাদা দেয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় যুক্ত মঙ্গলশোভাযাত্রা সাম্প্রদায়িক। মঙ্গল শোভাযাত্রা কোন ক্রমেই বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জীবনধারার সঙ্গে যুক্ত নয়। কেননা মঙ্গল শোভাযাত্রার সাথে শিরক বা মহান আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্বের ধারণা জড়িত। তাই মঙ্গল শোভাযাত্রা সার্বজনীন নয়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার উৎসবও নয়।
পীর সাহেব চরমোনাই পরিশেষে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা, জি-এইট প্রভৃতি একযোগে পরিকল্পিতভাবে মুসলিম দেশগুলোর শিক্ষা-সংস্কৃতিকে তাদের ইচ্ছা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢেলে সাজাচ্ছে। বাংলাদেশকেও তারা তাদের উদ্দেশ্যসাধনের যন্ত্রে পরিণত করে চলছে। তাদের ই ঘৃণ্য ভূমিকার গ্রাস থেকে আত্মরক্ষার করে চলার জন্যে নিজেদের আত্মশক্তির বিকাশ ঘটাতে হবে।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
-
আইএবি নিউজ: অদ্য ২৯ জানুয়ারি'১৭ মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় চন্দনা চৌরাস্তা সংলগ্ন ময়মনসিংহ রোডে টেকনগপাড়াস্থিত সৈকত কনভেনশন হলে ইসলামী আন্দ...
-
Ashraf Ali Sohan - Musical artist, Writer, Web Developer, and young Entrepreneur from Bangladesh Ashraf Ali Sohan Is a Bangladeshi Islamic s...
-
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন (১৯৯১-২০১৬) প্রতিষ্ঠাতা ইসলামী আন্দোলন এর সফল রূপকার, ইসলামের মুক্তিদাতা চরিত্রকে জনমানসে প্রত...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন