সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবির মূর্তি স্থাপনের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে তা অপসারণের দাবিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলন আজ ১১ ফেব্রুয়ারী শনিবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী ।
এসময় নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী, সহ-অর্থ সম্পাদক মাওলানা হাজী মুজাম্মেল হক, হেফাজত আমীরের প্রেসসচিব মাওলানা মনির আহমদ, মাওলানা মীর ইদরিস, হাফেজ মুবিনুল হক, মাওলানা আ ন ম আহমদুল্লাহ, মওলানা ইউনুস, মাওলানা জুনাইদ জওহার, মাওলানা ইকবাল খলিল, মাওলানা হাফেজ জাকারিয়া, মাওলানা কামরুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা ওসমান কাসেমী, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মুফতি ইমরান খলিল, মাওলানা আবদুর রহমান প্রমূখ।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।
সাংবাদিক সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা !
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
আজকের সংবাদ সম্মেলনে কষ্ট করে উপস্থিত হওয়ার জন্য আপনাদের সবাইকে আন্তরিকভাবে মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আমরা অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ হৃদয় নিয়ে আজ আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি এই বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ধারণায় ‘মেজরিটি মাস্ট বি গ্রান্টেড’ বলে একটি বিষয় রয়েছে; কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই ব্রাহ্মণ্যবাদের আজ্ঞাবাহী একশ্রেণীর পেইড ও প্রপাগান্ডিস্ট মিডিয়া ও ইসলামবিদ্বেষী সেকুলার অপশক্তি এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৃহত্তর তৌহিদি জনতার ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ঈমান-আক্বিদার বিরুদ্ধে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পন্থায় অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আমরা মনে করি, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপনও সেই ধারাবাহিকতারই একটি অংশ।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা!
জাতীয় ঈদগাহের উত্তর পার্শে এবং দেশের মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার সর্বোচ্চ স্থান সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে কথিত ন্যায়ের প্রতীক গ্রিক দেবী থেমিসের মূর্তি স্থাপন হচ্ছে চরম ধৃষ্টতা এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের অবমাননাও বটে। এদেশের সংবিধানের সাথেও এটি সাংঘর্ষিক, অর্থাৎ সংবিধানের ২ (ক), ১২ এবং ২৩ অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণ বিরোধী। এটি দেশের তৌহিদি জনতার ঈমানী চেতনা, ধর্মীয় ভাবধারা ও মূল্যবোধের বিরোধী এবং সেইসাথে এটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের নিজস্ব ইতিহাস, কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও আত্মমর্যাদাবোধেরও সম্পূর্ণ বিপরীত। গ্রিক দেবীর মূর্তি নয়, মুসলমানদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতীক হলো মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন। মহান আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামে মূর্তি স্থাপন হারাম। মূর্তিকে ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে বিশ্বাস করলে বা এমন ভাবনা অন্তরে পোষণ করলে, কোনো মুসলমানের ঈমান থাকবে না। হাদীস শরীফে রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক আযাবপ্রাপ্ত লোক হবে মূর্তি প্রস্তুতকারীগণ। ইসলামে মূর্তি স্থাপন, মূর্তিকে সম্মান জানানো এবং ন্যায়ের প্রতীক মনে করা শিরক।
রোমানদের কাছে ন্যায়ের প্রতীক কল্পিত গ্রিক দেবীর সাথে এই দেশের ঐতিহ্য, ইতিহাস ও ভাব-সম্পদের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই, তাসত্ত্বেও কীভাবে এবং কাকে খুশি করতে হাইকোর্টের সামনে এরকম অগ্রহণযোগ্য ও বিজাতীয় মূর্তি স্থাপন করা হলো? কারা কী উদ্দেশ্যে এটি করার সুযোগ পেলো? কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে দেশের মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। দেশের ৯২ ভাগ মুসলমানের চিন্তা ও চেতনার পরিপন্থি গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। গ্রিকপুরাণের কল্পিত দেবী থেমিস রোমানদের কাছে ন্যায়ের প্রতীক হতে পারে, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা তাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য থেকে ধার করে কেন হীন ঔপনিবেশিক ধ্যানধারণা লালন করবো? আমরা ভূইফোঁড় কোনো জাতি নই যে পরজীবিতার আশ্রয় নিতে হবে। অন্যদিকে, উদাহরণস্বরূপ: আমাদের প্রতিবেশী হিন্দু অধ্যুষিত ভারতের সুপ্রিমকোর্ট-প্রাঙ্গণে কোনো ধরনের মূর্তি স্থাপনের নজির নেই। এছাড়া খ্রিস্টান অধ্যুষিত আমেরিকার সুপ্রিমকোর্টের সামনে পৃথিবীর সফল আইনপ্রণেতা হিসেবে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (স.)-এর সম্মানে একটি স্থাপনা রয়েছে। তাহলে আমাদের হাইকোর্টের সামনে কেন গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন করা হবে? যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!
গুটিকয়েক গণবিচ্ছিন্ন বাম ও সেকুলারপন্থী বুদ্ধিজীবীরা মিডিয়ার মারফতে গ্রিক দেবীর মূর্তিকে ‘ভাস্কর্য’ বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। ভিনদেশী রোমানদের উলঙ্গ গ্রিক দেবীর মূর্তিকে শাড়ি পরিয়ে বাঙালি সংস্কৃতির আদলে উপস্থাপনÑ আমাদের জাতিগত হীনম্মন্যতারই বহিঃপ্রকাশ। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে কোনো গ্রিক দেবীর ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। তাছাড়া ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণা পোষণ কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হতে পারেনা। মুসলমানরা স্থাপত্যকলা ও শিল্পকলার বিরুদ্ধে নয়, কিন্তু গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপনপূর্বক আমাদের জাতীয় মন ও মানসে ঔপনিবেশিক বিজাতীয় কৃষ্টির অনুপ্রবেশ আমরা বরদাশত করবো না। এছাড়া সময়ান্তরে মানব-প্রতিকৃতি এবং পৌত্তলিক ধ্যানধারণার সাথে সম্পৃক্ত বিশেষ জীব-জানোয়ারের মূর্তি তৈরি করে সেগুলোকে ঢালাওভাবে ‘বাঙালি সংস্কৃতি’ বলে সর্বজনীন করার অপরাজনীতিও আমরা রুখে দিতে সবসময় বদ্ধপরিকর।
বিগত ৬’ই ফেব্রুয়ারি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’র আমীর শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (দা.বা.) সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, মুসলমানদের ঈমান, আক্বীদা ও ঐতিহ্য রক্ষার লক্ষ্যে হাইকোর্ট-প্রাঙ্গণ থেকে এই গ্রিক মূর্তি অপসারণ করতে হবে; অন্যথায় আলেম-ওলামা বৃহত্তর তৌহিদি জনতাকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনে রাজপথে নেমে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে, এই বিষয়ে কোনো আপস হবে না এবং কোনো ছাড় দেয়া হবেনা।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিবিসি’কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, “ভাস্কর্য এবং মূর্তির মধ্যে পার্থক্য বোঝা প্রয়োজন। ভাস্কর্য এবং ধর্মীয় প্রতিমাকে গুলিয়ে ফেলার একটা প্রবণতা আমাদের সমাজে আছে। সেই সুযোগ নেয় ধর্মীয় উগ্রবাদিরা। এখনও তাই হয়েছে।” আমরা মনে করি, তার এই বক্তব্য ঠিক মলমূত্রকে খাদ্য বলে চালিয়ে দেওয়ার নামান্তর। ভাস্কর্য এবং মূর্তি’র পার্থক্যের জ্ঞান তার মতো ধর্মীয় জ্ঞানহীন অ্যাটর্নি জেনারেল থেকে শিখতে হবেনা। দেশের আলেমসমাজকে বোকা ভাবাই মূর্খতার পরিচায়ক।
বিবিসি’কে তিনি আরো বলেছিলেন, ‘রোমান আইন থেকেই আমাদের বিচারের বিষয়ের উৎপত্তি। সেজন্যই অন্যান্য দেশের মতো এই ভাস্কর্য করা হয়েছে।’ একটি স্বাধীন ঐতিহ্যবাহী জাতির অ্যাটর্নি জেনারেল হয়ে তার এহেন বক্তব্য অসমীচীন, কারণ তিনি এই বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদের বিচারব্যবস্থায় এখনো যে ঔপনিবেশবাদের গোলামির চর্চা চলছে, সেই অপ্রিয় সত্য প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিলেন। আমরা মনে করি, আমাদের বিচারব্যবস্থার সংস্কার অপরিহার্য, কেননা ব্রিটিশ ঔনিবেশবাদের রেখে যাওয়া এবং গড়ে দেওয়া পুরোনো ও পশ্চিমা মধ্যযুগীয় আইন ও নীতিমালা এখন পর্যন্ত আমাদের বিচারব্যবস্থায় চালু রাখার অর্থই হলো, আমরা এখনো ব্রিটিশ ঔনিবেশবাদের গোলামি থেকে নিজেদের সম্পূর্ণ মুক্ত করতে পারিনি। আজকে এই ব্যর্থতা স্বীকার করে আমাদের বিচারব্যবস্থা ও আইনতত্ত্বকে ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক পবিত্র কোরআনের আলোকে ঢেলে সাজাতে হবে, এবং যতক্ষণ তা করা হবেনা, ততক্ষণ এদেশের গণমানুষ প্রকৃত ইনসাফ ও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হতে থাকবে।
কর্মসূচীসমূহ:
১. সুপ্রিমকোর্ট-প্রাঙ্গণ থেকে গ্রিক মূর্তি অপসারণের দাবিতে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর পক্ষ থেকে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি বরাবরে স্মারকলিপি পেশ।
২. ২৪ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার, বাদ জুমা, ঢাকা বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট ও চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লাহ শাহী মসজিদ চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ।
৩. পরবর্তীতে জেলা শহরে বিক্ষোভ-মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
আপনাদের সকলকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে আজকের সংবাদসম্মেলন এখানেই শেষ করছি।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
-
অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন: বর্তমান দেশের জাতীয় রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্মের নাম ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। যাকে একটি উজ্বল সম্ভ...
-
আসবো আবার ফিরে ------------------------------------------------------------------------ - মুহিব খান কারবালা হতে পলাশী পেরিয়ে শাপলার পা...
-
চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রান্ড ময়দানে বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি চট্টগ্রাম জেলা আয়োজিত চরমোনাইয়ের নমুনায় তিন দিনব্যাপী বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন