আইএবি নিউজ: ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির সংবাদ সম্মেলনে শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামী নেতৃবৃন্দ বলেছেন, স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা থেকে উপমহাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুযুর্গ হাফেজ্জী হুজুর এবং মুফতি আমীমুল ইহসান (রহ.)-এর নাম বাদ না দিলে এবং সড়কের নামফলকে তাদের নাম পুন:সংযোগ না করলে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে। আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে দাবী আদায়ে আগামী ৩১ মার্চ রাজধানী বাইতুল মুকাররম মসজিদের উত্তর গেটে বিক্ষোভ সমাবেশসহ ৭ দফা আন্দোলনের কর্মসুচি ঘোষণা করা হয়। আন্দোলনের অন্যান্য কর্মসুচি হচ্ছে, সারাদেশে ব্যাপক গণ-সংযোগ। জেলা ও বিভাগীয় শহরে ওলামা ও সুধি সমাবেশ। জাতীয় ওলামা ও সুধি সমাবেশ। সিটি কর্পোরেশন ঘেরাও। মানববন্ধন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত ও স্মারকলিপি পেশ। এসব কর্মসুচির তারিখ পর্যায়েক্রমে ঘোষণা করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, হাফেজ্জী হুজুর এবং মুফতি আমীমুল ইহসান (রহ.)-এর বিরুদ্ধে মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবিরের দায়ের করা রিটের মাধ্যমে গোটা আলেমসমাজ, মসজিদ, মাদরাসা ও ইসলামী জনতাকে স্বাধীনতা বিরোধী ও রাজাকার অপবাদ দিয়ে সম্মানহানি করার ষড়যন্ত্র চলছে। অবিলম্বে স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা থেকে এ দুই বুযুর্গের নাম বাদ দিয়ে সড়কের নাম পুনঃর্বহাল করা না হলে রক্ত দিয়ে হলেও দেশের জনগণ এ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে।
‘ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটি’র আহবায়ক বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়ত মাওলানা ক্বারী শাহ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী হুজুরের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেণ দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সিনিয়র সহ সভাপতি, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী, জামিয়া মুহাম্মদিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবুল কালাম, মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর আমীর মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, জাতীয় ইমাম সমাজের সভাপতি হাফেজ মাওলানা কারী আবুল হুসাইন, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব শেখ গোলাম আসগর, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, মাওলানা মুজীবুর রহমান হামিদী, মাওলানা ফয়জুল করীম কাসেমী, মাওলানা মূসা বিন ইজহার, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা সানাউল্লাহ, মাওলানা মাসউদুল করীম, মাওলানা সাঈদুর রহমান, মাওলানা সুলতান মহিউদ্দীন, মাওলানা আকরাম হুসাইন প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আমীরে শরীয়ত হযরত মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) বাংলাদেশের অবিসংবাদিত বুজুর্গ, সমকালীন রাজধানীর প্রবীণতম আলেম যিনি চল্লিশের দশক থেকে ঢাকায় ইসলামপ্রচার, ধর্মীয় শিক্ষা ও আদর্শের প্রসার, সমাজসেবা, আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শন ইত্যাদির মধ্য দিয়ে নিজেকে অকল্পনীয় উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে হাফেজ্জী হুজুরের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। যুদ্ধ চলাকালিন তিনি তাঁর অনুসারী আলেম-উলামা ও জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, এ সংগ্রাম জালিমদের বিরুদ্ধে মাজলুমদের সংগ্রাম। তোমরা মাজলুমদের পক্ষ হয়ে জালিমদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও। তাঁর এ ঘোষণার পর দেশের হাজার হাজার আলেম-উলামা ও তার অনুসারীগণ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।এমতাবস্থায স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকায় হাফেজ্জী হুজুরের নাম দেখে তাঁর সকল ছাত্র-ভক্ত ও গুণগ্রাহীগণ সীমাহীন বিস্মিত ও চরমভাবে ব্যথিত। দেশবাসীও হতবাক।
অন্যদিকে মুফতি আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী বরকতী (রহ.) এদেশের একজন প্রথিতযশা ইসলাম বিশেষজ্ঞ বুজুর্গ আলেম।তিনি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের প্রথম খতীব ছিলেন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে তাঁর কোন নেতিবাচক ভূমিকা কল্পনাও করা যায় না। তিনি ছিলেন রাজধানী ঢাকার সর্বজনমান্য মনীষী আলেম। কতিপয় নাস্তিকের প্ররোচনায় এ মহান বুযুর্গদের নাম স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকাভূক্ত করা হলে দেশের জনগন চক্রান্ত কারীদের রুখে দাঁড়াবে।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, যুগশ্রেষ্ঠ বুজুর্গ মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুরের নামে রাজধানীতে কোন সড়কের নামকরণের দাবী বা চেষ্টা তাঁর স্বজন ও ভক্তদের পক্ষ থেকে কখনোই করা হয়নি। সরকার ও সিটি কর্পোরেশন স্বপ্রণোদিত হয়ে তাঁর নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ভবনের সম্মুখস্থ সড়কটির নাম ‘মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর সড়ক’ রাখেন। বিশেষকরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দলীয় মেয়র হানিফ ও বঙ্গবন্ধুকন্যার অনুমোদনেই এ নামকরণ হয়। দীর্ঘদিন তাদের নাম বহাল থাকার পর, মূল রিটে এ নাম না থাকা সত্তে¡ও সম্পূরক আবেদনে হাফেজ্জী হুজুরের নাম কে বা কারা কি উদ্দেশ্যে অন্তর্ভুক্ত করলেন এবং এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্ত কার্যকর করলেন তা জাতির কাছে একটি জিজ্ঞাসা হয়েই থাকবে। উচ্চ আদালতও কিসের ভিত্তিতে তাঁর নামে সড়কের নামকরণ সঠিক হয়নি বিবেচনা করে সেটি বাতিল করে নামটি মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন সেটিও জনগণের সামনে স্পষ্ট নয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, হাফেজ্জী হুজুর স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সময় কোন রাজনীতির সাথেই যুক্ত ছিলেন না। তাঁর স্বাধীনতা বিরোধী হওয়ার কোন সুযোগ নেই এবং এ সম্পর্কিত কোন যুক্তি বা তথ্য-প্রমাণ কারো কাছেই পাওয়া যাবে না। স্বাধীনতাবিরোধী কোন সংগঠনের সাথে তাঁর দূরতম কোন সম্পর্কও ছিল না। তিনি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এবং সর্বজনমান্য আলেম, ইমাম ও পীর হিসেবে মজলুম বাঙ্গালীদের পক্ষে ও জালেম পাক-বাহিনীর বিপক্ষে সাধ্যমত ভূমিকা রেখেছেন। যা তাঁর সম্পর্কে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক কমান্ডার ও সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের শ্রদ্ধাপূর্ণ মন্তব্য থেকে স্পষ্ট।
নেতৃবৃন্দ এ অচিন্ত্যনীয় ও চরম অস্বাভাবিক বিষয়টি পুন:র্বিবেচনার দাবী জানান। রাষ্ট্র, সরকার ও বিচার বিভাগকে একজন প্রাতঃস্মরণীয় মনীষীর অন্যায় মানহানী এবং এর মাধ্যমে তাঁর ভক্ত, লাখো -কোটি মানুষের অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনার প্রতি সুদৃষ্টি দানের আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাববেন এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে দেশবাসীকে আশ^স্ত করবেন বলে নেতৃবৃন্দ আশা করেন। বিচারালয়- সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গও রায়ের সাথে যুক্ত তালিকায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের অন্যায়-অন্তর্ভুক্তির আশু প্রতিবিধানে ভূমিকা রাখবেন এবং নিরপরাধ এক মনীষীর প্রতি এ ধরণের মিথ্যা অপবাদ ও তাঁর মরনোত্তর লাঞ্ছনার প্রতিকার করে কোটি জনতাকে স্বস্তি প্রদান করবেন।
ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটি এদেশের ইসলামপ্রিয় কোটি-কোটি মানুষের হৃদয়ের আকুতি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরছে। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
-
আইএবি নিউজ: অদ্য ২৯ জানুয়ারি'১৭ মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় চন্দনা চৌরাস্তা সংলগ্ন ময়মনসিংহ রোডে টেকনগপাড়াস্থিত সৈকত কনভেনশন হলে ইসলামী আন্দ...
-
Ashraf Ali Sohan - Musical artist, Writer, Web Developer, and young Entrepreneur from Bangladesh Ashraf Ali Sohan Is a Bangladeshi Islamic s...
-
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন (১৯৯১-২০১৬) প্রতিষ্ঠাতা ইসলামী আন্দোলন এর সফল রূপকার, ইসলামের মুক্তিদাতা চরিত্রকে জনমানসে প্রত...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন