বাংলাদেশ স্বাধীন হয় মাত্র নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে, এর বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয় তারও কম সময়ের মধ্যে। ইঙ্গ-মার্কিন প্লান ছিল বিশ বছরের, টার্গেট খ্রিস্টরাজ্য নির্মাণের। ভারতের প্রোগ্রাম ছিল পঁচিশসালা, উদ্দেশ্য ভূটানের মতো একেবারে গিলে ফেলা। রাশিয়ার পরিকল্পনা ছিল আরো কম সময়ের, লক্ষ্য সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠনের। চূড়ান্ত অভীষ্টে যদিও ছিল ভিন্নতা, তথাপি প্রাথমিক পরিকল্পনায় সবার ছিল একই চিন্তা।
যাই হোক, পহেলা বৈশাখের একাল-সেকাল অনেক দীর্ঘ। আমি একজন মুসলিম বাঙ্গালী হিসেবে আমার সোনার বাংলার পহেলা বৈশাখের কথাই বলছি। এইতো গেল কিছু দিন আগে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছূ সংখ্যক তরুণ শিক্ষার্থী সকল বাঙ্গালীদের আনন্দের একটি জায়গা তৈরী করল।
তরুণরা পহেলা বৈশাখ ১৩৯৬ বঙ্গাব্দে (১৪ এপ্রিল,১৯৮৯ ইং) এক আনন্দঘন বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে। তখন এই উৎসবের নাম ছিল “বৈশাখ উৎসব ১৩৯৬-আনন্দ শোভাযাত্রা” শিরোনামে। কিন্তু বছরের চাকা ঘুরতে না ঘুরতেই ১৩৯৭ বঙ্গাব্দ থেকে প্রথমবারের আনন্দ শোভাযাত্রার পরিবর্তে বর্ষবরণের এ শোভাযাত্রা “মঙ্গল শোভাযাত্রা” নামে প্রচার করা হচ্ছে সারা দেশে।
তবে দূঃখের কথা হচ্ছে, সেদিন যে বাঙ্গালী তরুণ শিক্ষার্থীদের নির্ভিক অক্লান্ত পরিশ্রমে আয়োজিত হয়েছিল “বৈশাখ উৎসব” তা একদিন “মঙ্গল শোভাযাত্রা” নাম ধারণ করবে, কোন দিন তাদের ভাবনার জগতে উদয় হয়নি। তাদের স্বপ্নের ফসল পয়লা বৈশাখে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব একদিন দেব-দেবীর শোভাযাত্রা হিসেবে বাঙ্গালী ও বাংলাদেশের মানুষের কাছে পেশ করা হবে তার কল্পনাও তারা করেনি।
এখন জানার বিষয় হচ্ছে, পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা কিভাবে যোগ হল ?
বাংলা সালের শেষ দিনকে বলা হয় চৈত্রসংক্রান্তি। এ দিনটি হিন্দুদের নিকট বিশেষ গুরূত্বপূর্ণ। হিন্দুদের বিশ্বাস, এ দিনে আত্মদান, ব্রত, উপাসনা প্রভৃতি ক্রিয়াকর্ম পূণ্যজনক। তাই তারা যুগ যুগ ধরে চৈত্র মাসের শেষ দিনটি “চরকপূজা” নামে বৈশাখের দ্বিতীয় বা তৃতীয়দিন পর্যন্ত উদযাপন করে আসছে। হতে পারে এভাবেই বৈশাখী উৎসব ও মঙ্গল শোভাযাত্রা একাকার হয়ে গেছে।
তাছাড়া, বাংলা উইকিপিডিয়াতে প্রদত্ব ভাষ্য থেকে বুঝা যায়, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও মঙ্গল কাব্য সবই হচ্ছে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষঙ্গ। হিন্দুদের বিশ্বাস মতে, পহেলা বৈশাখে অশুভ শক্তিকে তাড়াতে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছে। তাই তারা অকল্যাণ তাড়াতে প্রতি বছর শ্রীকৃষ্ণের জন্ম দিনে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে ।
অন্যদিকে, মঙ্গলকাব্যে বলা হয়েছে বিষ্ণু দেবতার পত্নী লক্ষীদেবীর বাহন হচ্ছে পেঁচা, রামের বাহন হনুমান, দূর্গার বাহন সিংহ, গণেশের বাহন ইঁদুর, স্বরসতীর বাহন হাঁস, গাভী রামের সহযাত্রী, সূর্য দেবতার প্রতীক ও ময়ূর কার্তিকের বাহন ইত্যাদি নিয়ে শরীরে দেব-দেবীর প্রতিকৃতি ধারণ করে মঙ্গল শোভাযাত্রা করে থাকে হিন্দুসমাজ। কালচক্রে এভাবেই একীভুত হয়ে পড়ে বাঙ্গালী ও হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি।
পরিশেষে লিখে যাই, ৯৩ ভাগ মুসলমানের এ দেশে কোন অবস্থাতেই এসব অপসংস্কৃতি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হতে পারে না। কারণ আমরা মুসলমান, এ সোনার বাংলায় গাইব আমরা ইসলামের জয়গান। এ বসুমতিতে মুসলিম মিল্লাত সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ট জাতি।
ইসলাম পূর্ব জাহালতের যুগে গোটা দুনিয়া বর্বরতার ঘন তিমিরে ছিল নিমজ্জিত। এমন সময় সভ্যতা-সংস্কৃতির আকাশে রক্তিম আভা নিয়ে উদিত হন ইসলামী সভ্যতা -সংস্কৃতির রবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
এ সূর্য যখন আপন মহিমায় স্বীয় দীপ্তি বিস্তার করতে লাগল তখন রজনীর তিমির আধারে উদীয়মান সকল কুসংস্কৃতির শশী-তারা স্থিমিত হয়ে গেল। ইসলামের মহিমায় সবাই বিমোহিত হয়ে তার সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলল। আল্লাহ পাকের ফরমান, তোমাদের জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। এজন্য ইসলাম ধর্মের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। সংস্কৃতি হচ্ছে জীবনসত্তার অন্তরঙ্গ ও বহিরঙ্গের সামগ্রিক রূপ। সেটি যদি হয় মানানসই, আত্মনির্ভরশীল, পঙ্কিলতামুক্ত, তাহলে তা অনুসরণীয়।
তাই কিসে আমাদের গর্ব ? আমরা মুসলামান। বিশ্বাসী এক আল্লায়। ঘৃণায় ভরা আমাদের অন্তর মূর্তি পূজা তথা পৌত্তলিকতায়। দ্বীনের প্রাধান্য আমাদের সবকাজে। ভয় করি এক আল্লাহকে গোপন ও প্রকাশ্যে। ঈমানের দাবীকে পূরণ করতে সদা থাকি তৎপর। এতেই গর্ব। এতেই অহংকার। তাই ইসলামের পতাকা হাতে নিয়ে, মদীনার নবীর সংস্কৃতিকে ধারণ করে আমরাও শ্লোগান তুলি,
রাষ্ট্র যার তার, ইসলাম সবার।
মঙ্গল শোভাযাত্রা যদি হয় এবার ,
ইসলামী সংস্কৃতি রক্ষায় যুদ্ধ হবে আবার।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
-
আইএবি নিউজ: অদ্য ২৯ জানুয়ারি'১৭ মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় চন্দনা চৌরাস্তা সংলগ্ন ময়মনসিংহ রোডে টেকনগপাড়াস্থিত সৈকত কনভেনশন হলে ইসলামী আন্দ...
-
Ashraf Ali Sohan - Musical artist, Writer, Web Developer, and young Entrepreneur from Bangladesh Ashraf Ali Sohan Is a Bangladeshi Islamic s...
-
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন (১৯৯১-২০১৬) প্রতিষ্ঠাতা ইসলামী আন্দোলন এর সফল রূপকার, ইসলামের মুক্তিদাতা চরিত্রকে জনমানসে প্রত...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন