চির শাশ্বত বানী, "আল্লাহ যাকে চান তাকে হেদায়েত দেন"। কারো হেদায়েত পাওয়া ও ইসলামের উপর নিজের জীবনকে পরিচালিত করে আল্লাহ পাকের প্রিয় বান্দা-বান্দী হওয়া সম্পূর্ণটাই মহান আল্লাহ পাকের করুণা ও রহমতের উপর নির্ভর। তাই মহান আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া, তিনি আমাদের গোটা পরিবারকে দ্বীনের সু্শীতল ছায়াতলে নিবিষ্ট করে নিয়েছেন।
বাংলাদেশে হাজারো ফেতনা ফ্যাসাদের মাঝে, বাতিল ফেরকার ভীরে চিশতিয়া ছাবেরিয়া তরীকা আল্লাহ পাকের এমন রহমত যে, এই তরীকার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে জিকির পৌছেছে। এই তরীকার শায়েখদের শত ত্যাগ, অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে লক্ষ লক্ষ পথভোলা আল্লাহর বান্দা আল্লাহ ওয়ালায় পরিণত হয়েছে। যারা দুনিয়াতেও বাদশা, আখেরাতেও বাদশা। দাওয়াত, তালীম, তাসকিয়ায়ে নফস, জিহাদ এই চারটি মিশনকে সামনে রেখে চলার কারণে ১০০% হক দল হিসেবে ফতোয়া দিয়েছেন বিশ্ববরেণ্য হক্কানী আলেম ওলামাগণ।
আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করে, আমি কিভাবে চিশতিয়া ছাবেরিয়া তরীকার অন্তর্ভুক্ত হলাম? যদি এক কথায় উত্তর দিতে হয় তাহলে বলবো, এই তরীকা তথা চরমোনাই আমার রক্তে মিছে আছে। কথাটি বলার কারণ, আমার আব্বু বিয়ের আগেই কুতুবুল আলম সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম রহ. এর কাছে বায়াত গ্রহণ করেন এবং নিজের জীবনকে পুরোপুরিভাবে পরিবর্তন করে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে পরিচালিত করার মাধ্যমে গোটা পরিবারকে পরিপূর্ণ ইসলামের গণ্ডিতে নিয়ে আসেন। ছোট বেলা থেকেই দেখেছি শায়েখ রহ. এর প্রতিটি কথাবার্তা আব্বু মেনে চলতেন। শায়েখের রহ. এর প্রতি আব্বুর ছিল অগাধ শ্রদ্ধা ও সীমাহীন মোহাব্বত। বর্তমান শায়খদ্বয়ের কাছেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। আব্বুকে দুনিয়াবি মোহে আকৃষ্ট ও বাতিলের সাথে কখনোই আপোষ করতে দেখেনি। মাঝে মাঝে শায়েখ রহ. এর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আব্বু আবেগআপ্লুত হয়ে পড়তেন। তিনি সবসময় চেয়েছেন, চিশতিয়া ছাবেরিয়া তরীকার নিয়ামতকে হাসিল করার মাধ্যমে নিজেকে একজন খাছ মুরিদ হিসেবে গড়ে তুলতে। তাই শায়খ রহ. আব্বুকে অনেক মোহাব্বত করতেন। বর্তমান শায়েখদ্বয়ও মোহাব্বত করেছেন। আব্বু মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত একজন নিবেদিতপ্রাণ হয়ে এই তীকার একনিষ্ঠ খাদেম হিসেবে নিজেকে ব্যাপ্ত রেখেছেন। আমি নিজেকে ভাগ্যবতী ও গর্বিত মনে করি, কারণ আমার নামসহ আমাদের তিন ভাইবোনের নাম শায়েখ রহ. রেখেছিলেন। আর তাই জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখেছি, আমার পরিবার থেকে আর দশটা পরিবারের কথাবার্তায়, আচার আচারনে, ন্যায়-নীতিতে বিস্তর ব্যবধান। এমনকি আমার আত্মীয়- স্বজনের সাথেও আমার পরিবারের পার্থক্য সহজেই অনুমান করা যায়। আমাদের পরিবার থেকে মেহনতের ফলে, আলহামদুলিল্লাহ ধীরে ধীরে আমার আত্মীয় স্বজনের অনেকেই এই তরীকার উসিলায় নিজেদের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন। আমার যেই বড় ফুপা, আম্মু সামনে যেতো না বলে, রাগ করে আমাদের বাসায় আসতো না, এখন তিনি এই তরীকার মাধ্যমে পুরোপুরি নিজেকে বদলে ফেলেছেন, দ্বীনের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে, খেলার ছলে, খাওয়ার সময়, এমনকি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সবসময় টেপ রেকর্ডারে আমাদের প্রানপ্রিয় শায়েখ কুতুবুল আলম সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম রহ. এর বয়ান ছেড়ে রাখা হতো। বয়স কম থাকার কারণে হয়ত তখন কিছুই বুঝা সম্ভব ছিল না কিন্তু "বরিশালের পূর্ব কোণে, চরমোনাইয়ের ময়দানে" এই গজলটি ঠিকই গুনগুন করা হতো সারাদিন। এ যেনো অন্যরকম ভালোলাগা। ধীরে ধীরে বুঝার ক্ষমতাও বাড়তে লাগলো, সাথে ভালো লাগাটাও। যেনো হৃদয়ে একটু একটু করে স্থান করে নিচ্ছে চিশতিয়া ছাবেরিয়া তরীকা। তখন বুঝতে শুরু করলাম এই কথাগুলো কোন সাধারণ কথা নয়, যেনো কোন পবিত্র মুখ বয়ান করছে, তাই তো এত তাছির, অন্তরে দাগ কেটে দেয়। যে কথাগুলো ইসলামের কথা, যে কথা আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার পথকে সহজ করে দেয়। আর তাই তো শায়েখ রহ. ইন্তেকালের সময় অশ্রু জলে ভেসেছিলাম পুরো পরিবার। আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমানে আমরা যোগ্য শায়েখ পেয়েছি, যিনি শায়েখ রহ. এর আদর্শ ও স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন। শায়েখ রহ. এর অপূর্ণ কাজ বা মিশনকে পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবায়ন করাই যেনো বর্তমান শায়খদয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
কিন্তু স্বভাবগত ভাবেই আমি অন্ধভাবে, না জেনে কোন বিষয়কে বা কাউকে অনুসরণ করার পক্ষপাতি ছিলাম না। হক ও বাতিল ফেরকার ব্যাপারে পড়াশুনা করলাম, বুঝার চেষ্টা করলাম, একজন মুসলমান হিসেবে আসলে নির্ভুল হক পথ আমার জন্য কোনটি? আসলেই কি চিশতিয়া ছাবেরিয়া তরীকা সেই তরীকা, যে তরীকা
আমাকে প্রকৃত মোমিন হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর পাকের রহমতে চিশতিয়া ছাবেরিয়া তরীকায় ন্যূনতম কোন ভুল খুঁজে পাই নি, বরং এই তরীকার বিশুদ্ধতা খুঁজতে যেয়ে ভালোলাগাটা বেড়েছে দ্বিগুণ।
চরমোনাইর মাফহিলে যাওয়ার সময় হলেই দেখেছি আব্বুর চোখে মুখে আনন্দ, উচ্ছাস। মাহফিল থেকে যখন ফিরে আসতেন তখন নানা প্রশ্নে আব্বুকে ব্যস্ত করে তুলতাম। মাহফিল কেমন হয়েছে মাহফিল কেমন হয়েছে? কত মানুষ হয়েছে? শায়েখ কি বয়ান করেছেন, ক্যাসেট কিনে এনেছে কিনা? কত প্রশ্ন? তখন কল্পনা করতাম চরমোনাই মাহফিলটা কেমন হয়? মানুষগুলো মাহফিলে কি করে? ইশ, যদি মাহফিল দেখতে পারতাম, বয়ান শুনতে পারতাম কিন্তু তা কেবল কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। আলহামদুলিল্লাহ, ৪ বছর ধরে অনলাইনে চরমোনাই মাহফিল লাইভ দেখতে পারি। এখন মাহফিল এলেই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করি, কখন আমাদের প্রাণপ্রিয় শায়েখদের বয়ান শুনবো , নিজেকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পথ তরান্বিত করবো। পাপি আত্মাকে পরিশুদ্ধ করবো।
যে বাতি স্বয়ং মাওলা জ্বালায়, সে বাতি নিভানোর ক্ষমতা কারো নেই। আল্লাহ চিশতিয়া ছাবেরিয়া তরীকার নেয়ামত পৌঁছে দিন বিশ্বময়।
ফাতিমা খাতুন
নারায়ণগঞ্জ
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
-
আইএবি নিউজ: অদ্য ২৯ জানুয়ারি'১৭ মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় চন্দনা চৌরাস্তা সংলগ্ন ময়মনসিংহ রোডে টেকনগপাড়াস্থিত সৈকত কনভেনশন হলে ইসলামী আন্দ...
-
Ashraf Ali Sohan - Musical artist, Writer, Web Developer, and young Entrepreneur from Bangladesh Ashraf Ali Sohan Is a Bangladeshi Islamic s...
-
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন (১৯৯১-২০১৬) প্রতিষ্ঠাতা ইসলামী আন্দোলন এর সফল রূপকার, ইসলামের মুক্তিদাতা চরিত্রকে জনমানসে প্রত...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন